টাইমসনিউজ ডেস্ক
বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধন করে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করা, তাঁদের চাকরিকালীন সুবিধা দেওয়া এবং নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করার বিষয়গুলো অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সচিবালয়ে আজ রোববার ‘বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা’বিষয়ক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক আনোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক খাতের সমস্যা নিরসনে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যে ১৮ দফা সমঝোতা হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। ওই ১৮ দফা সমঝোতার একটি ছিল বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধন করা।
বৈঠকের পর শ্রম উপদেষ্টা বলেন, তিন মাস আগে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় পোশাক খাতের অবস্থা নাজুক ছিল। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ১৮ দফার অনেক কিছুরই বাস্তবায়িত হয়েছে। পোশাক খাতের পাওনা পরিশোধের বিষয় অনেক জটিল। সরকারের কাজও এটা নয়। দেখা যায়, মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছেন। ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা নিতে পারছেন না বলে তিনি মজুরি দিতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই মালিক ২০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘কারখানামালিকদের মধ্যে যাঁরা এখনো শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেননি, তাঁদের অনেকেই মনে করছেন সরকার তা দিয়ে দেবে। কিন্তু সরকারের এটা কাজ নয়। সরকার এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে, করছেও।’
শ্রম উপদেষ্টা ও শ্রমসচিব সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে যোগ দিয়ে তিন দিন আগে দেশে ফিরেছেন। এবারের অভিজ্ঞতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছে। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসাই পাওয়া গেছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা তুলে নেওয়ার কথাও বলেছে।
শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশ আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল।
সূচনা বক্তব্যে শ্রমসচিব বলেন, অনেক আলোচনার পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮ দফা নিয়ে মালিক-শ্রমিকপক্ষের চুক্তি হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে অসন্তোষ হওয়ার কথা নয়। অথচ অসন্তোষের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহের রাস্তা এই মুহূর্তেও (আজ বেলা একটা) বন্ধ। দু-একটি কারখানা অসন্তোষ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী এবং শিল্প পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। কিন্তু ফল মিলছে না। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন থাকলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন, হাজিরা বোনাসহ টিফিন বিল ও নাইট বিল দেওয়া, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, রেশন চালু, ঝুট ব্যবসা বন্ধে কেন্দ্রীয় তদারক ব্যবস্থা, জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা দেওয়া ইত্যাদি ছিল ১৮ দফার অন্যতম বিষয়। এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।